“নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনিয়মের অভিযোগ”

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ রোগীরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসক সংকটসহ এক্স-রে মেশিন অচল হয়ে পড়ায় গরিব রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। এতে প্রতিনিয়ত উপজেলাবাসী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ দেখেও দেখছে না বলে সাধারণ রোগীদের অভিযোগ।
অভিযোগে জানা গেছে, নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জনসংখ্যার জন্য উপজেলা পর্যায়ে একমাত্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে কর্মকর্তা ও ডাক্তারদের সেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। নোংরা পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সুইপার, ঝাড়–দার, আয়াদের দিয়ে গরিব রোগীদের ইনজেকশন পুশ করা হয়। সময় মতো ডাক্তার না থাকায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ওষুধ নেই বলে গরিব রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।
আমাদের নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন সরেজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখে জানান, ভেতরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, আবাসিক রোগীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালজুড়ে বিড়াল, কুকুড়ের রাজত্ব। রোগীরা ব্যবস্থাপত্রের জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেও ওষুধ বিপণন প্রতিষ্ঠানের লোকদের দৌরাত্ম্যে অসহায় সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এক সময় প্রধানত গাইনী রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে গড়ে উঠে, তবে বর্তমানে গাইনী রোগীদেরই সবচেয়ে বেশি হেনস্থার শিকার হতে হয়। দুর-দুরান্ত থেকে সন্তানসম্ভবা কোন গাইনী রোগী আসলেই চিকিৎসকেরা তাকে উন্নত চিকিৎসার নামে অপারেশন(সিজার) করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে রোগীরা ভীত হয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শই মেনে নিচ্ছেন। এতে করে প্রাথমিক উপায়ে সন্তান প্রসব এর চেয়ে অপারেশন(সিজার) করতে প্রায় কয়েকগুন বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক ভুক্তভোগী জানান, সম্প্রতি তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান ব্যাক্তিগত চিকিৎসা নিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে রেফার্ড করেন। এতে তার ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়। এত টাকার ব্যবস্থা করতে তার সব কিছু বিক্রি করতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করলে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতাম না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক রোগী জানান, হাসপাতালে গেলে প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন আর এন্টাসিড ছাড়া তেমন কোনো দরকারি ওষুধ দেওয়া হয় না। এতে গরিব রোগীদের পড়তে হয় বিপাকে। বেশি দামে তাদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিতে হয়।
রোগীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারদের সঙ্গে প্রাইভেট কিনিকের এক শ্রেণির দালালের সখ্য রয়েছে। তাদের ভিড়ে রোগীরাও সেবা নিতে পারেন না। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। অভিযোগ আছে, এসব প্রাইভেট ক্লিনিকের সঙ্গে চিকিৎসকদের রয়েছে সখ্য। রোগী পাঠিয়ে তারা কমিশন নেন। প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখার সুযোগে কতিপয় চিকিৎসক বছরের পর বছর অন্যত্র বদলি না হয়ে একই কর্মস্থলে থেকে যাচ্ছেন। সকাল সন্ধ্যা দু’বেলায় তাদের ক্লিনিকে দেখা যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে উচ্চ পর্যায় থেকে নিষেধ রয়েছে বলে তিনি জানান।
অনলাইন ডেস্ক; www.24khobor.com
Most Featured Product

